Thursday, September 3, 2009

আমি খুনী, ধর্ষক, চাদাঁবাজ, ডাকাত, গুন্ডা! আমার নামে মামলা হোক

আমি খুনী, ধর্ষক, চাদাঁবাজ, ডাকাত, গুন্ডা! আমার নামে মামলা হোক। মামলা আদালতে যাক। বিচারক রায় দিক আমার ফাঁসি হোক। মাথা পেত নেব।


কিন্তু বিনা-বিচারে আমাকে হত্যা করার কী অধিকার আছে রাষ্ট্রের? এই রাষ্ট্রের জন্য কি লড়াই করেছিল আমার আগের প্রজন্ম? একই রাষ্ট্রে বাংলা ভাইয়ের বিচার হবে কিন্তু ডা. টুটুলকে রাষ্ট্র খুন করবে বিচার ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে? কেন?

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি-ই কি এদেশের ১৫ কোটি মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু নয়?

বিচার ব্যবস্থার আওতার বাইরে যত শতশত নাগরিককে হত্যা করেছে রাষ্ট্র তার পূর্ণ খতিয়ান চাই। প্রতিটি হত্যার যথাযথ তদন্ত ও বিচার চাই।

রাষ্ট্রকে আজ দাঁড় করালাম বিচারের কাঠগড়ায়।

Sunday, August 30, 2009

রাষ্ট্রের হাতে যদি নাগরিক নিরাপত্তা না পায় তবে সেই রাষ্ট্র ব্যর্থ

কথায় আছে, বাঘে ছুলে হয় আঠরো ঘা আর পুলিস ছুলে ছত্রিশ ঘা! পুলিসের মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি করা এরকম একটি কথা নিশ্চয় একেবারে অকারণে তৈরি হয়নি। এর উত্তরে পুলিসের ভাষ্য হচ্ছে, এটি চালু হয়েছে ব্রিটিশ আমলে – যখন স্বদেশি বিপ্লবীদের ধরার নামে পুলিস যাকে-তাকে ধরে অমানুষিক নির্যাতন চালাতো। বাঘের ভয়কেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল তখন পুলিসের ভয়। ঠিক আছে, ব্রিটিশ আমলের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম – তারা ভিনদেশি শত্রু ছিল, কিন্তু এই স্বাধীন বঙ্গদেশে যে হাজারে-বিজারে মানুষ মরছে পুলিস আর তাদের মাসতুতো ভাই র‌্যাবের হাতে, তা-ও আবার বিচার ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, তার কি ফয়সালা হবে? এটি কি আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের অস্ত্র ও ক্ষমতার অপব্যবহার নয়?

এটি যে অস্ত্রের ও ক্ষমতার অপব্যবহার, পুলিসের আইজি নূর মোহাম্মদ সাহেব কিন্তু তা স্বীকার করতে নারাজ। ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারকে সপ্তাহ দুয়েক আগে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি আরো দাবী করেছেন যে পুলিস বা র‌্যাবকে অস্ত্র দেয়া হয়েছে ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। তারা সেটাই করছে, নিরপরাধ কাউকে তারা খুন করছে না। তিনি আরো বলেছেন যে, ক্রসফায়ারে মানুষ খুন হওয়া এদেশে নতুন কিছু নয়, কিন্তু তাতে নিরপরাধ কেউ কখনোই খুন হয়নি।

যাক, পুলিসের হাতে যে মানুষ মারা যাচ্ছে সেটা অন্তত তিনি অস্বীকার করেননি। সাথে সাথে বেশ ক’টি বেয়াড়া প্রশ্নও এল মনে। নূর মোহাম্মদ সাহেবের কথায় নিশ্চিত হলাম যে পুলিস যাদের মারছে তারা ‘ক্রিমিনাল’। প্রশ্ন হচ্ছে, কে তাদেরকে ক্রিমিনাল বলে এই রায় দিল? কোন আদালত? জানা মতে কোন আদালত সেই ‘ক্রিমিনালদেরকে’ ক্রিমিনাল বলে সাব্যস্ত করে রায় দেয়নি। হয় কোন মামলার আসামী হিসেবে পুলিস তাকে ধরতে চেষ্টা করছিল, বা সে পুলিসের হাত থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তার অপরাধ তখনো প্রমাণিত হয়নি। অথচ আইজি সাহেব তো বলছেন, নিরপরাধ কাউকে তারা খুন করেন না! তাহলে ধরে নেয়া যায় যে, পুলিস বা র‌্যাবের সদস্যরা নিজেরাই ঠিক করে নিচ্ছেন কে ক্রিমিনাল আর কে নয়! আইজি সাহেবের কাছে সবিনয়ে জানতে চাই, আইনগতভাবে আপনাদের কি সেই এখতিয়ার আছে? তাহলে আইন-আদালত-বিচার ব্যবস্থা একেবারে উঠিয়ে দেয়া হোক, কি বলেন?

এ প্রসঙ্গে আরো একটি কৈফিয়ত ইদানিং বেশ জোরেশোরে শুনা যাচ্ছে – পুলিস বা র‌্যাব আত্মরক্ষার্থে ‘অপরাধীদেরকে’ হত্যা করতে বাধ্য হয়। হক কথা, আত্মরক্ষা করার অধিকার প্রতিটি মানুষের আছে, চাই কি সে চোর হোক কিংবা পুলিস। মুশকিল হলো, পুলিস যদি আত্মরক্ষা করতে পারে তাহলে পুলিসের তাড়া খাওয়া ‘ক্রিমিনালটি’ কেন পারবে না? সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এখন এই কথা শুনে তেড়ে না এলেই হয়। কিন্ত আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, র‌্যাব বা পুলিসের হাতে নিহত হওয়া ‘ক্রিমিনাল’দেরকে কেন পায়ে বা শরীরের অন্য কোন আপাত নিরাপদ অঙ্গে গুলি না করে মাথায় বা বুকে গুলি করা হয়? আমাদের এলিট ফোর্স র‌্যাব বা পুলিশ কি তাড়াহুড়োয় ঠিকঠাক মতো লক্ষ্য স্থির করে মানে সই করে গুলি করতে পারে না? তাহলে তো ভীষণ চিন্তার কথা! পুলিশ ভাইয়েরা করিমকে গুলি মারতে গিয়ে রহিমকে গুলি করে ফেলবে আর সুশীল সমাজ তা চেয়ে চেয়ে দেখব তা তো হতে পারে না! পুলিসের উন্নত প্রশিক্ষণের দাবীতে এখনই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হোক। নইলে অশীল সন্ত্রাসী মারতে গিয়ে র‌্যাব যে সুশীল ভদ্দরলোকেদের ক্রসফায়ারে হত্যা করবে না তার কোন গ্যারান্টী কে দিবে।

ক্রসফায়ারের কথা যখন এলই, আরো দু’চারটি কথা বলা আবশ্যক। ক্রসফায়ার জিনিসটা যে আদতে কী আজও ঠিকঠাক মত বুঝে উঠতে পারিনি। বাংলায় এর কোন প্রতিশব্দও খুঁজে পাইনি। তবে সাধারণভাবে মনে হয় যে, দুই বা ততোধিক পক্ষের গোলাগুলির মাঝে কেউ (যে কোন এক পক্ষের বা একেবারে পক্ষনিরপেক্ষ) পরে গেলে সে ঘটনাটিকে ক্রফায়ার বলা যেতে পারে। তা-ই যদি হয়, তবে র‌্যাবের হাতে যারা খুন হয়েছে তার কোন কোন পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পরেছিল? এক পক্ষ তো র‌্যাব, যারা মরছে তারা সাধারণত র‌্যাবের বন্দী, তাদের কাছে অস্ত্র থাকার প্রশ্নই উঠে না। তাহলে অন্য পক্ষ কে বা কারা? পত্রিকায় প্রায়ই একঘেয়ে রিপোর্ট দেখি – ভোর রাতের দিকে র‌্যাব বন্দীকে নিয়ে গিয়েছিল অন্য ‘ক্রমিনালদের’ আস্তানা চিনিয়ে দিতে। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্য সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে শুরু করলে র‌্যাবও পাল্টা গুলিতে জবাব দেয় এবং অবধারিতভাবে দুই গোলাগুলির মাঝে গিয়ে হাজির হয় বেচারা মরণগামী ‘ক্রিমিনাল’। এই ধরণের রিপোর্ট পড়তে পড়তে প্রায়ই ভাবি রিপোর্টগুলো আসলে কারা লিখেন? পত্রিকার রিপোর্টার নাকি র‌্যাবের কোন কর্মকর্তা? কে জানে হয়তো বাড়তি সৎ-উপার্জনের জন্য অনেক র‌্যাব সদস্য পত্রিকাতেও পার্ট-টাইম চাকরি করেন। সে যাক, র‌্যাবের সদস্যরা যদি পত্রিকায় পার্ট-টাইম চাকরি করেন সেটা নিশ্চয়ই সংবিধান লঙ্ঘন করে না! ছোট দু’টো প্রশ্ন রেখে আজকের মত শেষ করব। এক: বন্দীকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের ডেরায় হাজির হওয়ার পেছনে র‌্যাবের উদ্দেশ্যটা আসলে কি? ঠিকানা চিনিয়ে দেয়াই যদি উদ্দেশ্য হয় তবে, সেই ঠিকানাটা কি বন্দী মুখে বলতে পারত না? নাকি র‌্যাবের হেফাজতে ততক্ষণে তার বাকশক্তির বারোটা বেঝে গেছে – এই সন্দেহটাকে পাত্তা দেব? দুই: এভাবে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে নিহত হওয়া মানুষদের জন্য সংবিধানে কি কোন বিধান আছে? তারা যেহেতু নিরাপত্তারক্ষীদের ভাষ্যে ‘ক্রিমিনাল’ তাই তাদের মৃত্যু উচিৎকাজ হয়েছে ভেবে আমাদের কি উচিৎ বগল বাজানো? নাকি সংবিধান যেহেতু প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে, তাই এদের মৃত্যুকে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা সাব্যস্ত করে রাষ্ট্রের কাছে কৈফিয়ত দাবী করা উচিৎ?

টিপাইমুখ বাঁধ-বিরোধী আন্দোলনঃ ল্যাম্পপোস্টের দুঃসাহসী অগ্রসৈনিকদের সমর্থনে গণসঙ্গীত

সূর্যের গান বন্ধু তোমার হাতে
জ্বালাও শ্লোগান তুমি অন্ধ এই রাতে

শোষণের কারাগারে ছিন্ন সময়
ঐকতানে বাঁধি এসো মানুষের জয়
আগুনের চোখ মেলে দাঁড়াও প্রভাতে

ঘুম ঘুম চোখে দাও সূর্যস্নান
ভবঘুরে পায়ে দাও মুক্তির শান
প্রতিঘাত জেনে নাও প্রতিটা আঘাতে।

সূর্যের গান

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

গানটি লিখেছেন সামহয়্যারইন ব্লগের নির্ঝর নৈঃশব্দ্য এবং সুর করেছেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য্য। রচয়িতা গানটি নিবেদন করেছেন টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ প্রতিরোধে আন্দোলনরত দেশ-বিদেশে অবস্থানরত প্রতিটি দেদীপ‌্যমান বাঙালির সমুখপদক্ষেপে।

বাঙালীর পণ বাঙালীর আশা, বাঙালীর কাজ বাঙালীর ভাষা, সত্য হোক। সত্য হোক। সত্য হোক।

শনি, ২১/০২/০৯ – ১২:৫৪ পুর্বাহ্ন

উনবিংশ শতকের শেষপাদে বাঙালী জাতির যে জাগরণ ঘটছিল তা দ্রুতই রূপ পেল বাঙালী রেনেসাঁয়। অথচ বিংশ শতকের চল্লিশের দশক এসে তা উবে গেল দ্বি-জাতি তত্তের ইসলামী ঝংকারে। এই সময়টুকু বাঙালীর কেটেছে অদ্ভূত এক অস্থিরতায়। তারপরও ইতিহাস বলে স্বাধীকার আন্দোলনকে বাস্তব রূপদানের এটিই ছিল স্বর্ণযুগ।

জাতি আর রাষ্ট্র যে ভিন্ন সত্তা সেটা বুঝতে বাঙালীরও সময় লেগে গেল বেশ কয়েকটি বছর। এক অর্থে বলা যায় সে শিক্ষাটি তরান্বিত করেছিল পাকিস্তানের বাপ জিন্নাহ। বাঙালী এই প্রথমবারের মত উপলব্ধি করল তার আসল পরিচয় সে বাঙালী। দ্বি-জাতির কথা বলে জিন্নাহ গড়ে তুলেছিল বাঙালী, পাঠান, পাঞ্জাবী, পশতু সব মিলিয়ে বহুজাতিক এক দেশ। উদ্দেশ্য ছিল একটাই – শোষণ। পাকিস্তান আক্ষরিক অর্থেই ছিল এক বৃহৎ শোষণের যন্ত্র। আখের রস বের করার মত মত করে নিঙড়ে ছোবড়া বানিয়ে দিচ্ছিল লঘিষ্ঠকে। বিদেশী ইংরেজ বেনিয়া যেমন করে ভারতবর্ষের সম্পদ লুঠ করে নিয়ে যেত সাগরের ঐ পাড়ে, বুর্জোয়া পাকিস্তানি প্রশসনই তাই করছিল, এপাড়ের সম্পদ দিয়ে ওপাড়ে গড়ে তুলছিল একের পর এক রাজধানী।

তাই বাঙালী যখন আত্মপরিচয় খুঁজে পেল, দিশেহারা হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান নামক যন্ত্রটি। খুব একটা দেরীও তাই তারা করেনি, বুর্জোয়ার প্রিয় জলপাই উর্দি এসে তখন দায়িত্ব নিল নিরন্ন-বিবস্ত্র জনতাকে শোষনের চাকাটি চালু রাখতে। কিন্তু গণবিপ্লব এমনই এক বস্তু যাকে ঠেকানোর ক্ষমতা পৃথিবীর কোন শক্তিরই নেই। বায়ান্নতে যে পরিচয় বাঙালীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল বস্তুত সেই বাঙালী পরিচয়ই বাঙালীর আসল পরিচয়। একবার স্বাধীন হওয়ার দুই যুগ পরে বাঙালী আবারও স্বাধীনতার লড়াই করল – সেও সেই পরিচয়ের ঐক্যের জোরেই। বরং সেবার প্রমাণ হয়ে গেল যে ধর্মের ভিত্তিতে যে জাতিতত্ত্ব জিন্নাহ মশায় বাঙালীকে গিলিয়েছিল তা বাঙালীর জন্য মোটেও উপাদেয় নয়, বরং বিষ। ঘৃনাভরে বাঙালী তা উগরে দিল নয় মাস ধরে। শুধু আত্মপরিচয়ই নয়, বাঙালী এই দু’যুগে প্রস্তুত করল তার সত্যিকারের মুক্তির চারটি ভিত্তি – জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতা।

কিন্তু বড়ই আফসোসের বিষয়, বাঙালী স্বাধীন রাষ্ট্র পেল ঠিকই, মুক্তি পেল না। কেন পেল না! কারণ ঐ একই – নামেরই শুধু বদল হয়েছে, আসলে ‘বাংলাদেশ’ রয়ে গেছে সেই সাবেকী শোষনের যন্ত্রই। কারণ, চার মূলনীতির একটিও বাঙালী পায়নি। জাতীয়তাবাদ ঢেকে গেছে ভাষা না রাষ্ট্র এই পরিচয়ের খোলসে। সমাজতন্ত্রীদের হাজারে-বিজারে হত্য করা হয়েছে – বিচারে, বিনাবিচারে। গণতন্ত্রের কথা কি আর বলব, গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য যে উপাদান জনগণ, তাদেরকেই রাখা হয়েছে অন্ধকারে; ভয় একটাই, ওরা ক্ষেপে উঠলে আরেক ‘৬৯ আসবে কিংবা আসবে ‘৭১। এভাবে জনগণের অসহায়ত্বের সুযোগে বার বার হানা দিয়েছে ক্যান্টনমেন্টের সাধুরা! যাদের পেটের খাওয়া এই জনতার পয়সায়ই জোটে, যাদের কথা ছিল জনতার রক্ষক হবার। হয়নি। বরং এমন সাধুরা এসে মুছে দিয়ে গেছে বাঙালীর মুক্তির আরেক শর্ত – ধর্মনিরপেক্ষতা।

কিন্তু এত কিছুর পরেও আশা ছাড়তে পারি না। ভরসা রাখি ঐ নিরন্ন মানুষের উপরেই। কারণ ওদের জাগতে আর কিছুরই প্রয়োজন নেই, শুধু একটি জিনিস বাদে। সেটি হল একটি পরিচয়। যে পরিচয় সবাইকে একটি সমতার প্রাঙ্গণে এনে দাঁড় করিয়ে দেবে। সেই পরিচয়টি হল আমরা বাঙালী।

বাঙালীর পণ
বাঙালীর আশা,
বাঙালীর কাজ
বাঙালীর ভাষা,
সত্য হোক।
সত্য হোক।
সত্য হোক।

‘সন্ত্রাসী’ হওয়া ছাড়া তার আর কি গন্তব্য থাকতে পারে?

Gaza

“ত্বতীয় মিসাইলটিও এসে পরল। আগের দু’টির একটির আঘাতে আমার বড় ভাই মারা গেল। আর বাকীদের বেশীরভাগই আহত হয়েছিল – রক্তাক্ত হয়ে কাতরাচ্ছে এখানে ওখানে। মাত্র একদিন আগেই আমাদের ত্রিশজনকে এই বাড়িটিতে পাঠিয়েছিল ইসরায়েলিরা। আমার ভাইটি আমার চোখের সামনে রক্তক্ষরণে কাতরাতে কাতরাতে মারা গেল। আমি অযথাই ছুটাছুটি করে পানি খুঁজতে গেলাম।”

দমকে দমকে ওঠা কান্না সামলে ছেলেটি বলে চলল, “আমার আরেক ভাই, ইসমায়েলও মারা গেল রক্তক্ষরণে – আমারই চোখের সামনে। আমার মা ও ছোটভাই, তারাও মারা গেল একইভাবে – গোলার আগাতে আহত হয়ে রক্তক্ষরণে। চার ভাই আর মা এরাই ছিল প্বথিবীতে আমার আপনজন; তারা সবাই আজ মৃত। আল্লা তাঁদের আত্মার শান্তি দিন।”

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ১৬ বছরের ফিলিস্তিনী কিশোর আহমেদ সামুনী এভাবেই বর্ণনা করছিল ৫ই জানুয়ারীর ইসরায়েলি আক্রমণ। জাতিসংঘ বলছে, যায়তুন শহরের একটি বাড়ীতে জনা তিরিশেক ফিলিস্তিনিকে পাঠিয়ে দিয়েছিল ইসরায়েলী সৈন্যরা। তারপর দিনই তাদের হত্যা করতে বাড়িটিতে তিনটি মিসাইল ছোড়ে তারা।

পিত্ব-মাত্ব-ভ্রাতা-ভগ্নীহীন হতভাগ্য আহমেদ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কি করবে এই নির্মম দানব শহরে? ‘সন্ত্রাসী’ হওয়া ছাড়া তার আর কি গন্তব্য থাকতে পারে? পাঠকের কাছে প্রশ্ন রইল।

ঈশ্বরের বিরুদ্ধে প্রচারণা

প্রায় সকল মানব সমাজেই ঈশ্বর অতি আদরের উপকরণ। রাজ-দন্ডের মালিক চিরদিনই ঈশ্বরের একান্ত সেবক, রক্ষক প্রমোটার। তাই ঈশরের বিরুদ্ধে যাওয়া কখনই সহজে সম্ভব ছিল না। একটা সময় ছিল যখন ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাস করা ছিল রাজ-অপরাধ। ঈশ্বরের বা তার প্রেরিত দূতদের বাণীর বিরুদ্ধে একটি বাক্য উচ্চারণের দায়েও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে এমনকি প্রাণও দিতে হয়েছে বহু ‘নাস্তিককে’। কোপার্নিকাস, ব্রুনো, গ্যালিলিও এরকম হাজার উদাহরণ আছে ইতিহাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে সেসব বাক্য ইদানিং ঈশ্বরের সেবকরাও প্রচার করছে, ঈশ্বরের মহিমা হিসেবেই!

তারপরেরও ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে নাস্তিকরা টানাটানি করেছে – সে বহুদিনের ইতিহাস, নতুন নয়। নাস্তিকরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মশকরা এখনো করে যাচ্ছে। ইদানীং নাস্তিকরা জোরেসোরে এক নতুন ‘ভেক’ ধরেছে – ‘মিলিট্যান্ট এ্যাথেইজম’। নাস্তিকরা হঠাৎ করে যুদ্ধংদেহী হয়ে উঠছে প্বথিবীব্যাপী! ওয়াশিংটন ও লন্ডনে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে রীতিমত পয়সা খরচ করে বিজ্ঞাপণ প্রচার করছে নাস্তিকরা। ব্রিটেইনজুড়ে ৮০০ বাসের গায়ে বিজ্ঞাপণ সাঁটানো হয়েছে – “সম্ভবত কোন ঈশ্বর নেই, তাই এখন দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে জীবনটাকে উপভোগ কর।” এই বিজ্ঞাপণে অনুপ্রানিত হয়ে স্পেন ও ইতালির নাস্তিকরাও বিপুল প্রচারণায় নেমে পড়েছে।
Atheist Bus Campaign

প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স ‘সম্ভবত’ শব্দটির ব্যাপারে তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করেছেন যেটি কর্ত্বপক্ষ জোর করে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাদের বলছে এটি প্রমানসাপেক্ষ ব্যাপার, তাই সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। হুমমম…ঈশ্বরের সেবকরাই এখনও তাহলে বেশি শক্তিশালী! চার্চের বা মসজিদের পান্ডারা যখন মহাসমারোহে প্রচার করতে থাকে ঈশ্বর হ্যান ঈশ্বর ত্যান তখন তো প্রমাণের প্রয়োজন পরে না। তখন লাগে না ‘সম্ভবত’ ধরনের কোন শব্দের সংযোজন।

নাহ্‌ ঈশ্বর তার বিশ্বাসীদেরকে এখনও ফেয়ার প্লে শেখাতে পারেননি।

ভোটের নাটক আর বাঙালীর মুক্তির দূরাশা

বাঙালীর পিঠ দেয়ালে না ঠেকলে সে কিছুই করে না, চুপাচাপ আলসেমি উপভোগ করে। যখন ঠিক পাছার গোড়ায় হাগু এসে পরে, তখন শয়তান-নমরুদ যাকে পায় তার ছায়ার তলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। কিন্তু এভাবে শেষ রক্ষা হবে কী? এইবার নাহয় বেকুব বাঙালী আওয়ামি লীগকে ভোট দিয়ে ঝামাতের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচিয়ে মহাউল্লাসে ফেটে পরল, তারপর? বাঙালীরা ঝামাতকে ‘না’ বলতে পারলেও ভবিষ্যতের আওয়ামীলীগ কি তা পারবে? অতীতে কি তা পেরেছিল?

বাঙালী তার অতীত বেকুবির শাস্তি হিসেবে আজকের শ্বাসরোধী অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী ঠেকাতে বিএনপি আর বিএনপি ঠেকাতে আওয়ামী। এই করে আর কত? চামে চামে ঝামাতের শিকড় লকলক করে বাড়ছে, বাড়তে বাড়তে এখন ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরে পৌঁছে গেছে; পুরোটা শুষে নেবে বলে সরব-নীরব হুমকী দিচ্ছে। বাঙালী আবারও ভাবছে কি করা যায়! বিএনপি একদিন আওয়ামীলীগকে ঠেকাতে ঝামাতের সাথে বউচি খেলতে গিয়েছিল। এখন ঝামাত তাকে ঠিক করে দেয় কার পরে কে চি দেবে। তারপরেও বিএনপি’র শিক্ষা হয়নি। আহারে শিক্ষার কোন শেষ নেই!

হে নির্বোধ বাঙালী জাতি, এরা কেউই তোমার বন্ধু না। তোমার আচরণ পাল্টাও, চরিত্র পাল্টাও, আসল পরিচয় খুঁজে বের কর – অটোমেটিক তোমার নেতা আর নীতি পেয়ে যাবে। এই ধূর্ত আর খল রাজনীতির বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেতে আর কোন বিকল্প নেই।

পাবলিকের ক্ষমতার উৎস নাকি তার সংঘবদ্ধ হওনের ইছ্ছায়…হাসতে হাসতে শেষ

পাবলিকের ক্ষমতার উৎস নাকি তার সংঘবদ্ধ হওনের ইচ্ছায়। হাসতে হাসতে শেষ! এই পাবলিক যেই সেই পাবলিক না দাদারা – এরা স্বাধীন বাংলাদেশের পাবলিক। এগো ধারনা, খাইতে না পাই তো কি হইছে! দ্যাশ তো স্বাধীন :)! তারপরেও কইবেন পাবলিকের সংঘবদ্ধ হওনের ইচ্ছাই যথেষ্ঠ?

মাগার পাবলিকের যে ইচ্ছাই নাই, সেইটার কি হইব! বাপে খুন করে পোলারে, পোলায় বাপেরে, ভাইয়ে করে ভাইরে খুন। ঘরে ঘরে সারা দেশে ইলেক্শান আইলেই মানুষ পাগলা কুত্তা হয়া যায়। ইলেক্শান শেষ, পাবলিক আবার গত্তে ঢুকে। জিনিসপত্রে দাম বাইরা আসমানে, পেট ফুইলা মইরা গেলেও পাবলিক আওয়াজ করে না। বাচ্চাগো দুধে ম্যালামাইন, ঝণ-পেরতিনিদি পাবলিকেরে আবঝাব বুজাইতাছে, দ্যাশে-বিদ্যাশে-য়ুরপ-আম্রিকায় টেসটিং হইতাসে, পাবলিক চুপ। পাবলিকের ফান্ডে পেরতিনিদিগো বাল-বাচ্চা-শালা-দেওর মউজ-মাস্তি করতাছে, পাবলিক চুপ। উত্তরান্চল খা খা করতাসে, বছরের ৬ মাস কাম-খাওন নাই, পাবলিক চুপ। দক্ষিনান্চলে ঝড়বন্যা লাইগাই রইছে – ঝড়-বইন্যা হইলেই পেরতিনিদিরা খুশি, বিদেশীরা কানতে কানতে আইসা কড়ি ঢাইলা দিব, পাবলিক চুপ। ঢাকা শহরে ৩০ পার্সেন্ট আদম সন্তান কুত্তা-বিলাইয়ের মত বস্তিতে কোনমতে দিন-রাইত পার করতাছে, পেরতিনিদিরা ঠিকই মৌজ মারতাছে, পাবলিক চুপ।

কইয়া শেষ হইব না দাদারা – মোদ্দা কতা হইল পাবলিকের খেমতা ডুমুর গাছের ফুল হয়া ধইরা রইছে, আসেন ইলেকশানের আগে আগে সবাই কয়েকটা কইরা ছিড়া আনি।

ঈশ্বরের রাজনৈতিক ক্ষমতালোভ

নাস্তিক মননের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। কোন একজন ব্যাক্তি যখন ঈশ্বরের ধারনাকে অস্বীকার করার মত অবস্থায় পৌঁছান, তখন তার মনে নাস্তিকতাকে জড়িয়ে কোন রাজনৈতিক ধান্দা থাকে না। এটি এমন একটি নৈতিক অবস্থা যখন মানুষ তার অনৈশ্বরত্বকে কোন স্বার্থ হাসিল করতে ব্যবহার করতে লজ্জা বোধ করে। সামস্টিকভাবে হয়তো এর প্রকাশ-প্রচার হতে পারে, কিন্তু নাস্তিকতা কখনই জোর করে চাপিয়ে দেয়ার জিনিস নয় – নাস্তিকতা নিতান্তই ব্যাক্তিগত উপলব্ধি-অর্জন।

কিন্তু ঈশ্বরবিশ্বাসীরা দলবদ্ধ। তাদের মূল শক্তিও ঐক্যে, যুথবদ্ধতায়। যুগে যুগে তাই ধর্মবাদীরা ভীষণ শক্তিশালী। কার বিরুদ্ধে তারা এই শক্তি ব্যবহার করে? নাস্তিকদের বিরুদ্ধে? আংশিকভাবে তা ঠিক। কিন্তু ধর্মবাদীদের আসল টক্করটা তার বিরুদ্ধেই যে তাদের স্বার্থে ন্যুনতম আঘাত করতে পারে। স্বার্থের ব্যাপারে ধর্মবাদীদের সেনসিটিভিটি এতই প্রবল তারা নিজেদের দল বিভক্ত করতেও দ্বিধা করে না। একই ধর্মের ভিতরেও তাই এত বিভক্তি। খ্রীশ্চানিটি আর ইসলামে এই বৈশিষ্টটি নগ্নভাবে প্রকাশিত। সেক্ট আর মাজহাব, দল আর উপদল – এভাবেই স্বার্থের লোভে ধর্মবাদীর যুগে যুগে বিভক্ত হয়েছে।

তার পরেও তারা শক্তিশালী। তারা প্রচন্ড ভোক্যাল। তারা ভীষণ তৎপর। অস্তিত্ব রক্ষায় তারা অনুক্ষন সচেতন। প্রাচীন-মধ্য-আধুনিক সব যুগেই ধর্মবেত্তারা তাদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে রাজনৈতিক পক্ষাপক্ষ অবলম্বন করার কৌশল। রাজা আর পুরোহিতের সম্পর্ক সাধারণ মানুষ স্মরণাতীত কাল ধরে দেখে এসেছে – রাজা ছাড়া পুরোহিত অচল, পুরোহিত ছাড়া অচল রাজা। মধ্যযুগে য়ুরোপীয় বর্বরতার পেছনেও ধর্মবাদীরাই ছিল। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে কয়েকশত চার্চের কর্ণধার ধার্মিক(!) পুরুষেরা। আর এসবই করেছে রাজার সহায়তায়। বিনিময়ে রাজা পেয়েছে আফিমে আসক্ত প্রজাকূল, নির্জীব-নির্বিরোধী-নিরাসক্ত। পুরোহিত মানুষকে বিশ্বাস করিয়েছে, রাজা নমস্য, রাজাই পিতা, রাজাই পতি, (ঈশ্বরের পরে) রাজাই পালনকর্তা, শাসনকর্তা। সমন্তসমাজে রাজা আর ধর্মীয় পুরোহিত ছিল সত্যিকারের আত্মীয়। আর প্রজাকূল – শাসন, শোষন আর করুনার পাত্র।

যুগ পাল্টেছে, সমাজের কাঠামো পাল্টেছে। কিন্তু এখনো সমাজপতিদের রক্ষাকবচ হয়েই আছে ধর্মীয় পান্ডারা। দেশে দেশে সকল সরকারই তোয়াজ করে ধর্মের পতাকাবাহী যেকোন প্রাণিকেই – চাই সে মানুষ হোক আর জানোয়ার। অন্যভাবে বলতে গেলে ঈশ্বর এখন পর্যন্ত গণমানুষের হতে পারেনি। তিনটি পরিষ্কার দলে তাবৎ দুনিয়া এখন বিভক্ত – রাজদন্ডের মালিক, ধর্মবাদী গোষ্ঠী আর সাধারণ মানুষ। সংখ্যার সবচেয়ে কম প্রথম দল, তারপর একটু বেশি দ্বিতীয় দল, আর সবচেয়ে বেশি তৃতীয় দল। অথচ, সংঘবদ্ধতা আর শক্তির দিক থেকে এই ধারা উল্টোমুখী।

কিন্তু কেন? সহজে এক কথায় বলতে গেলে মানুষ ব্যস্ত ঘাম ঝড়িয়ে তার জীবিকা অর্জনে, পুরোহিত বা রাজদন্ডের মালিক কারো কাছ থেকেই সে কিছু পায় না চায়ও না। আর পক্ষান্তরে রাজপতির ক্ষমতার উৎসই জনতা (অবাক হবেন না, তারাও তাই বলে!)। জনতা কখনই জানতে চায় না, তারা কার ক্ষমতার উৎস? কার খেলার ঘুটি? সুতরাং রাজপতির প্রয়োজন জনতাকে বশে রাখবার। মাঝখানে ফড়িয়া হয়ে এঁটে বসে ধর্মবাদীরা। রাজার প্রয়োজন মেটায় তারা, বিনিময়ে উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে বেঁচে থাকে মাত্র। আবার রাজা আর ধর্মবাদীরা জনতাকে শেখায় এই ধর্মগোষ্ঠী বড়ই সম্মানের পাত্র!

স্বার্থের প্রয়োজনেই ধর্মবাদীরা ঈশ্বরকে করে তুলেছে রাজনৈতিক ক্ষমতালোভী। এখানে নীতির কোন স্থান নেই।

মাদ্রাসা শিক্ষা ভাবনা

মাদ্রাসা ব্যবস্থা বন্ধ হবে না থাকবে না নিয়ে বিতর্ক আজকের নতুন নয়। কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবিদের দিয়ে রাস্ট্রের অঘোষিত মালিকেরা এ বিতর্ক চালু করেছে এবং চালিয়েও যাচ্ছে; কখনোই তার অবসান করেনি। একদিকে যেমন ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা সচল রেখেছে, তেমনি বুর্জোয়া-শখ মেটাতে আলাদা রকমের ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষা ব্যবস্থাও চলছে। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখছি। বাঙালি মুসলমানেরা এখন তাদের সন্তানদের জন্য এ দুই শ্রেণীর শিক্ষার পেছনে ছুটছে নিরন্তর। বাংলা মাধ্যমে যত ভালো সিলেবাসই থাকুক না কেন তাতে এখন আর বাঙালির রোচে না। যারা অর্থনৈতিক কারণে পারছে না সে মধ্যবিত্তরাই কেবলমাত্র নিজেদের সন্তানদের এই মধ্যম শ্রেণীর শিক্ষা দিচ্ছে – বাধ্য হয়েই দিচ্ছে; পারলে অন্য লাইন ধরতো।

যাই হোক, ধর্মভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা যে সমাজকে ধীরে ধীরে বন্ধ্যাত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এতে কারো কোন সন্দেহ নেই। মাদ্রাসার ছাত্ররা যতটা না ধর্মজ্ঞান অর্জন করে তার চেয়ে বেশি শেখে পরধর্ম ঘৃনা করা, যতটা না ধার্মিক হয় তার চেয়ে বেশি হয় অসৎ। এর কারণ কি? মৌলিক দু’টো কারণ হচ্ছে, ১) ধর্মকে ব্যবহার করে একদল লোক তাদের ফায়দা হাসিল করতে চেষ্টা করছে আর ২) ধর্মের প্রসারের অত্যাবশ্যক নিয়ামক হিসেবে ধর্ম এসব লৌকিক দুর্বলতাকে মেনেই নিয়েছে। অথচ ধর্মের উদ্দেশ্যই হওয়ার কথা ছিল মানব কল্যান। প্রাচীন ও মধ্যযুগে ধর্মের এইরকম স্ববিরোধীতা খুব একটা অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু এই আধুনিক কালে যখন রাস্ট্র স্থিত কাঠামো পেয়েছে, সেখানে এধরনের সাংঘর্ষিক ব্যবস্থা কিছুতেই থাকতে পারে না।

একইভাবে পাশ্চাত্যের অনুকরণে ইংরেজী শিক্ষা ব্যবস্থাও সমাজে আরেকটি প্যারালাল শ্রেণী তৈরি করছে এবং ইতিমধ্যে করেছেও। কথা বাড়িয়ে পাঠকের আর বিরক্তি উৎপাদন করতে চাই না। শুধু দু’টো কথা বলি – এসব অকল্যানকর পদ্ধতি যত দ্রুত বন্ধ হয় ততই মঙ্গল। কিন্তু, যমুনার পানি অনেকদূর গড়িয়ে গেছে। মোল্লা-তাল্লবেলেমরা এখন রিভল্ট করতে শিখে গেছে অন্যদিকে মাথার উপর তাদের ধর্মের অন্ধ পাষান-বোঝা। চাইলেই আর এখন মাদ্রাসা বন্ধ করা সম্ভব না। এ সত্য স্বীকার করে নিয়েই আমাদের সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।

ধর্মাচরণ ও বাঙ্‌লাদেশ- ৩

ধর্ম সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উঠলেই বাঙ্গালী মুসলমানের বিরক্তিও চরমে উঠে যায়। ইনারা ইশকুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বাইরে ঘুরে ঘুরে নিজেদের ধর্মবোধকে নিজের অজান্তেই তরল করে ফেলেছেন। যার কারণে ধর্মের বিপরীতে যায় এমন কাজ করতেও খুব একটা দ্বিধা করেন না।

উদাহরণ দিই – রোজার মধ্য-দুপুরে যদি এইরকম একজন বাঙ্গালীর সামনে আপনি খানাপিনার আয়োজন করেন, নাক কুঁচকে ভীষণ অবাক হয়ে উনি জিজ্ঞেস করবেন ‘সেকি রোজা রাখেননি?’ পালটা যদি তাকে জিজ্ঞেস করেন ফজরের নামায পড়েছেন কিনা, দেখবেন উনার মুখ লাজুক লাজুক হয়ে যাচ্ছে। ‘আসলে সেহরীর পর ঘুমিয়ে পরেছিলাম আরকি।’ তো যোহর পড়েছেন? ‘ না আসলে এত্ত ব্যস্ততা, আজকে মনে হয় আর হবে না, দেখি মাগরীবটা অবশ্যই পড়ব।’ এরপর ইনার কাজ হবে দ্রুত কেটে পরা।

বিজ্ঞানে বাঙ্গালী মুসলমানের আগ্রহ অপরিসীম, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যেন তা বাড়ছেই, বাড়ছেই। খুবই ভাল খবর। এভাবেই বাঙ্গালী জাতি একদিন বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠবে, বাড়বে যৌক্তিক চিন্তা-চেতনার চর্চা। উন্মুক্ত হবে মন, মনন। কিন্তু আসলেই কি হবে? বাঙ্গালীর মধ্যে বিশ্বদরবারে বিজ্ঞানে অবদান তো ঐ এক হিন্দু বাঙ্গালীরই – জগদীশ চন্দ্র বসু। কিন্তু ব্যাটাতো হিন্দু! মুখে স্বীকার না করলেও বাঙ্গালী মুসলমানের খুব একটা ভালো লাগে না বসু-ফসুর নাম মুখে আনতে। অবশ্য নেহাৎ ঠেকায় না পরলে আনেও না।

নাহয় নাই থাকলো অবদান, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক করতে তো আর বাধা নেই। বিজ্ঞানের হেন বিষয় নেই, যাতে বাঙ্গালী মুসলমানের বিরাট জ্ঞান নেই। ফিসিক্স, মেটা-ফিসিক্স, সাইকোলজী, এ্যান্থ্রপোলজী আপনি শুধু প্রসঙ্গ ছুড়ে দেবেন, দেখবেন তর্ক-বিতর্ক জমে গেছে। ইবনে-সীনা আর ডারউইন কেউই ইনাদের কাছে অপরিচিত দুরের মানুষ নন। বিবর্তনবাদ নিয়ে বিতর্কে বাঙ্গালী মুসলমান খুবই আমোদ পায়। বেশিরভাগ শিক্ষিত দাবীদার অন্তত তার শিক্ষার গুন-মানের মর্যাদা রাখতে হলেও বিবর্তনবাদের পক্ষে। আবার এদেরকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন যে ধর্মগ্রন্থমতে বিশ্বব্রিক্ষ্মান্ডের বয়স ৬০১২ বছর এই বক্তব্য তারা মানেন কিনা।

বাঙ্গালী মুসলমান এসব মানেনও আবার মানেনও না। ধর্ম সম্পর্কে কিছুটা জানেনও আবার জানেনও না। তাতে বাঙ্গালী মুসলমানের কিছু যায় আসেও না; তর্ক-বিতর্কে এতটুকু ভাটাও পরেনা। এভাবেই চলছে বাঙ্গালীর দৈনন্দিন ধর্মাচরণ। চলছে, চলবেই।

ধর্মাচরণ ও বাঙ্‌লাদেশ – ২

দেড়প্রস্থ খাওয়া শেষে যেই না একটু আরাম করে বসেছি সোফায়, আবার পরে গেলাম ব্যারিষ্টার সাহেবের সামনে। আসলে উনিই চলে এলেন, কি যেন খুঁজছিলেন, এবার আমিই যেচে তাকে বসতে বললাম পাশে। আশ-পাশের উৎসুক দু’এক জনের কানের রেডার লক্ষ্যস্থির করেছে আমাদের মৃদু আলাপচারিতায়। ফিরে যাই ওনার প্রথম প্রশ্নে – বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান, তারা যদি চান তো সরকারের বাধা কোথায় ইসলামী আইন-কানুন প্রচলন করতে? আমিও তাই বলি, সমস্যা তো কোথাও নেই। কিন্তু ঐ যে, একটা বিরাট যদি আছে এই প্রশ্নে। মানুষের চাইতে হবে, হিযবুত তাহিরীর বা হরকাতুল মুজাহিদীন চাইলে হবে না। মানুষকেই চাইতে হবে। এই যে শতকরা ৮০’র ওপর মানুষ মুসলমান, তারা কি চায়? চুরি করলে কব্জি কেটে দেয়া হোক? নাকি স্বামীর সাথে তালাক হলে স্ত্রীকে আরেক পুরুষের সাথে সহবাস-সমেত বিয়ে ও তালাক পূর্বক আগের স্বামীর সাথে আবার বিয়ে হোক? ইসলামী কানুনের নামে উন্মত্ত রাজতন্ত্র চালু হোক? ধর্মের লেবাস পরে মানুষ দেড় হাজার বছর আগের যুগে ফিরে যাক? না মানুষ তা চায় না। পরিষ্কারভাবেই মানুষ তা চায় না, এবং এই মানুষ লঘুভাগের ২০ শতাংশ মানুষ না, ঐ ৮০ শতাংশই। মানুষ ইসলামী-হিন্দু-খ্রীষ্ট কোন ধর্মীয় আইনই চায়না বলেই বাংলাদেশে ধর্মীয় আইন নেই। এতক্ষনে আবার কথা বলে উঠলেন ব্যারিস্টার সাহেব, “কেন? মুসলিম বিবাহ আইন? উত্তরাধিকার আইন?” হ্যাঁ ঠিক বলেছেন, ঐ আইনসমূহের অস্তিত্ব আছে সত্যি, কিন্তু ওগুলো তো সার্বজনীন আইন নয়। কখনো শুনেছেন, হিন্দু ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয়েছে মুসলিম আইনে? সুতরাং এই উপআইন, পাতিআইন এসব আসলে মূল্যহীন। বাংলাদেশে এখনো মানুষ সত্যিকারের শিক্ষিত হয়নি তাই, এইসব আইন এখনো টিকে আছে। দেনমোহরের মত অপমানকর ব্যবস্থা এদেশে এখনো দাপট নিয়ে চলেছে। তাই যখন দেখি নারী দিবসে কোন প্রমিন্যান্ট নারীবাদী নারীর হাতে নারীমুক্তির প্ল্যাকার্ড, মনে মনে বুঝতে চেষ্টা করি ইনি স্বামীর পকেট থেকে কত লক্ষ টাকা দেনমোহর হিসেবে হাতিয়েছেন?

আসলে এই প্রসঙ্গে জৈন-ব্রাক্ষন্য-ইসলাম আলাদা করে একেকটা নাম বলার দরকার নেই, সব রসুনের গোড়া একই জায়গায়। বেদ-বাইবেল-কোরান সব জায়াগায়ই এক মতের ছায়া, নারী পুরুষের ভোগ্যা। নারীর আলাদা কোন অনুভূতি নেই, বোধ নেই, মর্যাদা নেই – অস্তিত্বই নেই। এই যে নেই নেই নেই, এর থেকে মানুষের উপায় কি? উপায় আবার কি! উপায়ের জন্য কি মানুষ বসে আছে? হিন্দু বিধবাদের কি এখন বিয়ে হচ্ছে না? সতীত্বের অগ্নি-পরীক্ষা ইদানীং কবে কোথায় শোনা গেছে? হাসিনা-খালেদা-রওশন এরশাদ-বিদিশা এদের কি ইসলাম ছুটে গেছে? গেলে আমরা চুপ কেন? মৌলানারা চুপ কেন? আসলে যুগে যুগে মানুষ দরকার মতই বদলে নিয়েছে এই ধর্ম নামের উপকথাকে। যখন যেভাবে এই গালভরা ব্যবস্থা মানুষের সমসাময়িক পারিপার্শ্বিকের সাথে খাপ খাওয়াতে পেরেছে, তাই টিকে থেকেছে ধর্মের ছাতার তলায়।

তা থাকুক। কিন্তু সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে সামনে। এই সামনে যাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষার আলোয় ভেসে যাবে একদিন ধর্মাচরণের অপ্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ। যা টিকে থাকবে, তা হবে ঐ যুগের মানুষেরই এ্যাট্রিবিউট, কিংবা বলা যেতে পারে সামগ্রীকভাবে ঐ সমাজেরই ক্রাইটেরিয়া। ধর্মাচরণের মূল উদ্দেশ্য মানুষ শুধমাত্র শিক্ষিত হলেই বুঝতে পারবে – তখনই মানুষ ড. আহমদ শরীফের ভাষায় বলতে পারবে – “আমি জৈন-বৌদ্ধ-হিন্দু-ইহুদী-খ্রীষ্ট-মুসলমান শ্রাস্ত্র মেনে চলি কারণ আমি ঐসব শাস্ত্রে ভর করে মানুষ হতে চাই, কেবলমাত্র হিন্দু-মুসলমান ইত্যাদি হওয়ার জন্য নয়।“ শাস্ত্রটা পথ মাত্র গন্তব্য মানুষ হওয়া। আর একমাত্র উপযুক্ত শিক্ষাই পারে মানুষকে এই গন্তব্য চেনাতে।

ধর্মাচরণ ও বাঙ্‌লাদেশ – ১

“গনতন্ত্র গনতন্ত্র বলে আপনারা চিৎকার করছেন, তো আসুন গনতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত করি। যে দেশে বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান, সেখানের মানুষ চাইলে সরকার ইসলামী কানুন চালু করবে এটাই তো গনতন্ত্র – নাকি?” ঘরভর্তি লোকের সামনে আমার মুখের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ব্যারিস্টার সাহেব। যৌক্তিক কথা বটে! বন্ধুর বাড়ি এসে কে যায় বন্ধু-পত্নীর সই-পতির সাথে বাহাস করতে! কিন্তু ব্যারিস্টার সাহেব নাছোড়বান্দা – অনেকদিন যাবতই তিনি বিরক্ত আমার-আমাদের উপরে, যারা কিনা বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষের সমানাধিকার দাবী করে। আজ সুযোগ বুঝে আমাকে একহাত নেবার তাল করছেন। আমি এড়াতে চাইলেও, তিনি খোচাঁখুঁচি থামাতে রাজী নন। আবার জিজ্ঞেস করেন, “আপনারা তো চলনে-বলনে ইসলাম মানেন না, নামায-কালাম তফাত করে দিয়েছেন বহু আগেই, কাউকে আল্লাহ-বিল্লা করতে শুনলে মনে করেন বিলাপ করছে! তো কোন যুক্তির বশে ইসলামী নামখানা এখনো বিসর্জন দেননি?”

নাহ! বেচারা আজ ছাড়বেন বনে মনে হয় না, হয় ইসলামের নয় আমার অনৈসলামের খৎনা দিয়েই তবে শান্ত হবেন! তো জিজ্ঞেস করি, “‘ইসলামী নাম’ জিনিসটা কি?” “কেন এই যে প্রশ্ন আহমেদ – এখানে প্রশ্নটা বাদ দিলে, আহমেদ তো ইসলাম থেকেই চুরি করা! নবীজির আরেক নাম আহমেদ।” ঝটপট উত্তর ওনার।

ও আচ্ছা! এই তাহলে ইসলামী নামের শানে নুযুল। আমিতো ভেবেছিলাম বেচারা নামখানাকেই না আবার মুসলমানি দেয়া লাগে। আচ্ছা মুসলমানী ব্যাপারটার রহস্যটা আসলে কি? খৎনা তো খৃষ্টানরাও করে, আবার ইহুদীরাও করে। তো মুসলমানেরা কেন করে? মুসলিম বিশ্বের দিকে একবার তাকান, ইহুদী-খৃষ্টান ছাড়া যেন তাদের আর কোন শত্রু নেই। মুসলমানের মুখে শুধু একই কথা – ঘরে বাইরে ইহুদী-নাসারা-খেরেস্তানের দল মুসলিম জাহানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওদের মনে হয় আর কোন কাজই নেই, মুসলমানের ক্ষতি করতে পারলেই ওদের হেভেন-আফটার লাইফ নিশ্চিত! ভাবছিলাম, ব্যারিস্টার সাহেবকে জিজ্ঞেস করব কিনা, যে ইহুদী বাইবেল বলছে, তাদের প্রোফেট আব্রাহামের বংশধরদেরকে অন্যান্য বিধর্মীদের থেকে আলাদা করে চেনার জন্যই ঈশ্বর এই খৎনার আদেশ দিয়েছিলেন – মুসলমানেরা তাহলে কেন খৎনা করে ইহুদী পরিচয়ে পরিচিত হচ্ছে? নাহ্‌! সারাদিন রোজা রেখে বেচারার সংযমের বারোটা বেজে গেছে, বেয়াড়া প্রশ্ন করে বন্ধুর বাড়ির উৎসবের আমেজ নষ্ট করার ঝুঁকি নেয়া যায় না। তার বদলে জিজ্ঞেস করি, আব্দুল্লাহ নামটা কি ইসলামী নাম? “অবশ্যই, আব্দুল্লাহ মানে আব্‌দ-আল্লাহ্‌ অর্থাৎ আল্লার দাস, Slave of Allah” আবার তড়িৎ উত্তর পেলাম। কথায় বলে স্বভাব কি আর সহজে যায়, আমারও যাচ্ছে না – ফের জিজ্ঞেস করি “আমীনা?” এবার খানিকটা উষ্মাভরা জবাব পেলাম – “এটিও অবশ্যই ইসলামী নাম, মুহাম্মাদ(সঃ) এর মায়ের নাম। আপনারা নাস্তিক নাস্তিক ভাব করেন, যুক্তিবাদের নামে কলমা পড়েন কিন্তু সাধারন জিনিসটাও অবহেলাও শেখেন না।” মুচকি হেসে এবার বলি, নবী মুহাম্মাদের পিতা-মাতা কি মুসলমান ছিলেন? খাদিজা নাম যখন রাখা হয়েছিল, তখন কি তিনি মুসলমান ছিলেন? নাকি পরে নাম বদলেছিলেন? তেমনি সাহাবীরাও কি তাদের নাম বদলে ইসলামী নাম রেখেছিলেন? এত ইসলামী নাম কোথায় পাওয়া যাবে? কোন এনসাইক্লোপিডিয়ায় সংকলিত আছে ইসলামী নাম? তাহলে এই যে আব্দুল্লাহ, আমীনা, আবু তালেব, উসমান, উমর, আলী – এইসব নাম কেমন করে ইসলামী নাম হয়! নিমন্ত্রিতদের অনেকেই হো হো করে হেসে উঠলেন। তাদের থামাতে জলদি আবার কথার খেই ধরি – অর্থাৎ নামের মুসলমানিত্ব-হিন্দুত্ব-বৌদ্ধত্ব বলে আসলে কিছু নেই, তবে ভাষাগত পরিচয় আছে। হাজার হলেও নামওতো শব্দ – আর দশটা শব্দ-পদের মতই বিশেষ্য-বিশেষণ-ক্রিয়া।

দেখুন, কেউ যদি তার মেয়ের নাম রাখে বকুল/শিউলি/টগর/গোলাপী, আমরা গিয়ে প্রশ্ন করি না, এটা ইসলামী নাম না হিন্দু নাম। কেন করি না? নিজের অজান্তই কিন্তু আমরা নামের ধর্মীয় পরিচয় অস্বীকার করি, প্রতিদিনই করি। বড়জোড় বলতে পারি আরবী নাম, ফার্সী নাম, ইংরেজী নাম ইত্যাদি। কিন্তু গায়ের জোরে মানুষের নামের মুসলমানী তকমা দিতে গিয়ে আমরা বঙ্গীয় মুসলমানের আসল দুর্বলতা প্রকাশ করে ফেলি – অশিক্ষা এবং কুশিক্ষা।

আমাদের বেশিরভাগ মুসলমানই মনে করেন আরবী নাম মানেই ইসলামী নাম। অথচ তারা জানেনই না যে আরবী প্রথমে কাফেরদের ভাষা, তারপর ইহুদী, খ্রীষ্টান এবং সর্বশেষে মুসলমানের ভাষা। সুতরাং আরবীর উপর মুসলমানদের দাবী সবার থেকে কম। কিন্তু ব্যারিষ্টার সাহেবও অনেকের মতই স্বীকার করতে চান না বাঙ্গালী মুসলমান এখনো শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেনি। আফসোস করে বলি, বাংলা যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাত্র পাঁচটা বছর আগে ভাগ হতো, তাহলে মেট্রিক পাশ কেরানিও ওপার থেকেই ভাড়া করে আনতে হতো। এখানে বিতর্কের দরকার নেই, এটা ইতিহাস। যারা আজ বাঙ্গালী মুসলমান বলে গর্ব করেন, তারা তাদের বংশের প্রথম বা ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিতীয় পুরুষ যারা ইংরেজী শিখেছেন, শহরে দালানে বাস করেছেন। দেশ ভাগের সময় বাঙ্গালী তো গেরস্থই ছিল। এখন গন্ডায় গন্ডায় শহরে এসে বেশ শিক্ষিত হয়েছেন! টাকা করেছেন, সম্মান কিনেছেন। কিন্তু সলিড ফাউন্ডেশান নেই কারও, তাই এই প্রজন্মের বাঙ্গালী মুসলমান লোভী আর চরিত্রহীন। দেখবেন, শহরে কারো বাসায় মিলাদ হলে দশ জন লোক মেলানো ভার, আর মাউলানা যদি যদি বয়ান শুরু করে, সবারই গলায় ব্যাঙ ঢুকে খাকারি বেরুতে থাকে। অথচ নাম মুসলমান কি হিন্দু তা নিয়ে তাদের চিন্তার অন্ত নেই – হোক সে ডাক্তার, এঞ্জিনিয়ার বা আমাদের এই ব্যারিষ্টার সাহেবের মত আইনবিশেষজ্ঞ। এর থেকে সহসা মুক্তি নেই, পরের প্রজন্মের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।