Sunday, August 30, 2009

বাঙালীর পণ বাঙালীর আশা, বাঙালীর কাজ বাঙালীর ভাষা, সত্য হোক। সত্য হোক। সত্য হোক।

শনি, ২১/০২/০৯ – ১২:৫৪ পুর্বাহ্ন

উনবিংশ শতকের শেষপাদে বাঙালী জাতির যে জাগরণ ঘটছিল তা দ্রুতই রূপ পেল বাঙালী রেনেসাঁয়। অথচ বিংশ শতকের চল্লিশের দশক এসে তা উবে গেল দ্বি-জাতি তত্তের ইসলামী ঝংকারে। এই সময়টুকু বাঙালীর কেটেছে অদ্ভূত এক অস্থিরতায়। তারপরও ইতিহাস বলে স্বাধীকার আন্দোলনকে বাস্তব রূপদানের এটিই ছিল স্বর্ণযুগ।

জাতি আর রাষ্ট্র যে ভিন্ন সত্তা সেটা বুঝতে বাঙালীরও সময় লেগে গেল বেশ কয়েকটি বছর। এক অর্থে বলা যায় সে শিক্ষাটি তরান্বিত করেছিল পাকিস্তানের বাপ জিন্নাহ। বাঙালী এই প্রথমবারের মত উপলব্ধি করল তার আসল পরিচয় সে বাঙালী। দ্বি-জাতির কথা বলে জিন্নাহ গড়ে তুলেছিল বাঙালী, পাঠান, পাঞ্জাবী, পশতু সব মিলিয়ে বহুজাতিক এক দেশ। উদ্দেশ্য ছিল একটাই – শোষণ। পাকিস্তান আক্ষরিক অর্থেই ছিল এক বৃহৎ শোষণের যন্ত্র। আখের রস বের করার মত মত করে নিঙড়ে ছোবড়া বানিয়ে দিচ্ছিল লঘিষ্ঠকে। বিদেশী ইংরেজ বেনিয়া যেমন করে ভারতবর্ষের সম্পদ লুঠ করে নিয়ে যেত সাগরের ঐ পাড়ে, বুর্জোয়া পাকিস্তানি প্রশসনই তাই করছিল, এপাড়ের সম্পদ দিয়ে ওপাড়ে গড়ে তুলছিল একের পর এক রাজধানী।

তাই বাঙালী যখন আত্মপরিচয় খুঁজে পেল, দিশেহারা হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান নামক যন্ত্রটি। খুব একটা দেরীও তাই তারা করেনি, বুর্জোয়ার প্রিয় জলপাই উর্দি এসে তখন দায়িত্ব নিল নিরন্ন-বিবস্ত্র জনতাকে শোষনের চাকাটি চালু রাখতে। কিন্তু গণবিপ্লব এমনই এক বস্তু যাকে ঠেকানোর ক্ষমতা পৃথিবীর কোন শক্তিরই নেই। বায়ান্নতে যে পরিচয় বাঙালীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল বস্তুত সেই বাঙালী পরিচয়ই বাঙালীর আসল পরিচয়। একবার স্বাধীন হওয়ার দুই যুগ পরে বাঙালী আবারও স্বাধীনতার লড়াই করল – সেও সেই পরিচয়ের ঐক্যের জোরেই। বরং সেবার প্রমাণ হয়ে গেল যে ধর্মের ভিত্তিতে যে জাতিতত্ত্ব জিন্নাহ মশায় বাঙালীকে গিলিয়েছিল তা বাঙালীর জন্য মোটেও উপাদেয় নয়, বরং বিষ। ঘৃনাভরে বাঙালী তা উগরে দিল নয় মাস ধরে। শুধু আত্মপরিচয়ই নয়, বাঙালী এই দু’যুগে প্রস্তুত করল তার সত্যিকারের মুক্তির চারটি ভিত্তি – জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতা।

কিন্তু বড়ই আফসোসের বিষয়, বাঙালী স্বাধীন রাষ্ট্র পেল ঠিকই, মুক্তি পেল না। কেন পেল না! কারণ ঐ একই – নামেরই শুধু বদল হয়েছে, আসলে ‘বাংলাদেশ’ রয়ে গেছে সেই সাবেকী শোষনের যন্ত্রই। কারণ, চার মূলনীতির একটিও বাঙালী পায়নি। জাতীয়তাবাদ ঢেকে গেছে ভাষা না রাষ্ট্র এই পরিচয়ের খোলসে। সমাজতন্ত্রীদের হাজারে-বিজারে হত্য করা হয়েছে – বিচারে, বিনাবিচারে। গণতন্ত্রের কথা কি আর বলব, গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য যে উপাদান জনগণ, তাদেরকেই রাখা হয়েছে অন্ধকারে; ভয় একটাই, ওরা ক্ষেপে উঠলে আরেক ‘৬৯ আসবে কিংবা আসবে ‘৭১। এভাবে জনগণের অসহায়ত্বের সুযোগে বার বার হানা দিয়েছে ক্যান্টনমেন্টের সাধুরা! যাদের পেটের খাওয়া এই জনতার পয়সায়ই জোটে, যাদের কথা ছিল জনতার রক্ষক হবার। হয়নি। বরং এমন সাধুরা এসে মুছে দিয়ে গেছে বাঙালীর মুক্তির আরেক শর্ত – ধর্মনিরপেক্ষতা।

কিন্তু এত কিছুর পরেও আশা ছাড়তে পারি না। ভরসা রাখি ঐ নিরন্ন মানুষের উপরেই। কারণ ওদের জাগতে আর কিছুরই প্রয়োজন নেই, শুধু একটি জিনিস বাদে। সেটি হল একটি পরিচয়। যে পরিচয় সবাইকে একটি সমতার প্রাঙ্গণে এনে দাঁড় করিয়ে দেবে। সেই পরিচয়টি হল আমরা বাঙালী।

বাঙালীর পণ
বাঙালীর আশা,
বাঙালীর কাজ
বাঙালীর ভাষা,
সত্য হোক।
সত্য হোক।
সত্য হোক।

No comments:

Post a Comment