Sunday, August 30, 2009

ধর্মাচরণ ও বাঙ্‌লাদেশ- ৩

ধর্ম সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উঠলেই বাঙ্গালী মুসলমানের বিরক্তিও চরমে উঠে যায়। ইনারা ইশকুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বাইরে ঘুরে ঘুরে নিজেদের ধর্মবোধকে নিজের অজান্তেই তরল করে ফেলেছেন। যার কারণে ধর্মের বিপরীতে যায় এমন কাজ করতেও খুব একটা দ্বিধা করেন না।

উদাহরণ দিই – রোজার মধ্য-দুপুরে যদি এইরকম একজন বাঙ্গালীর সামনে আপনি খানাপিনার আয়োজন করেন, নাক কুঁচকে ভীষণ অবাক হয়ে উনি জিজ্ঞেস করবেন ‘সেকি রোজা রাখেননি?’ পালটা যদি তাকে জিজ্ঞেস করেন ফজরের নামায পড়েছেন কিনা, দেখবেন উনার মুখ লাজুক লাজুক হয়ে যাচ্ছে। ‘আসলে সেহরীর পর ঘুমিয়ে পরেছিলাম আরকি।’ তো যোহর পড়েছেন? ‘ না আসলে এত্ত ব্যস্ততা, আজকে মনে হয় আর হবে না, দেখি মাগরীবটা অবশ্যই পড়ব।’ এরপর ইনার কাজ হবে দ্রুত কেটে পরা।

বিজ্ঞানে বাঙ্গালী মুসলমানের আগ্রহ অপরিসীম, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যেন তা বাড়ছেই, বাড়ছেই। খুবই ভাল খবর। এভাবেই বাঙ্গালী জাতি একদিন বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠবে, বাড়বে যৌক্তিক চিন্তা-চেতনার চর্চা। উন্মুক্ত হবে মন, মনন। কিন্তু আসলেই কি হবে? বাঙ্গালীর মধ্যে বিশ্বদরবারে বিজ্ঞানে অবদান তো ঐ এক হিন্দু বাঙ্গালীরই – জগদীশ চন্দ্র বসু। কিন্তু ব্যাটাতো হিন্দু! মুখে স্বীকার না করলেও বাঙ্গালী মুসলমানের খুব একটা ভালো লাগে না বসু-ফসুর নাম মুখে আনতে। অবশ্য নেহাৎ ঠেকায় না পরলে আনেও না।

নাহয় নাই থাকলো অবদান, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক করতে তো আর বাধা নেই। বিজ্ঞানের হেন বিষয় নেই, যাতে বাঙ্গালী মুসলমানের বিরাট জ্ঞান নেই। ফিসিক্স, মেটা-ফিসিক্স, সাইকোলজী, এ্যান্থ্রপোলজী আপনি শুধু প্রসঙ্গ ছুড়ে দেবেন, দেখবেন তর্ক-বিতর্ক জমে গেছে। ইবনে-সীনা আর ডারউইন কেউই ইনাদের কাছে অপরিচিত দুরের মানুষ নন। বিবর্তনবাদ নিয়ে বিতর্কে বাঙ্গালী মুসলমান খুবই আমোদ পায়। বেশিরভাগ শিক্ষিত দাবীদার অন্তত তার শিক্ষার গুন-মানের মর্যাদা রাখতে হলেও বিবর্তনবাদের পক্ষে। আবার এদেরকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন যে ধর্মগ্রন্থমতে বিশ্বব্রিক্ষ্মান্ডের বয়স ৬০১২ বছর এই বক্তব্য তারা মানেন কিনা।

বাঙ্গালী মুসলমান এসব মানেনও আবার মানেনও না। ধর্ম সম্পর্কে কিছুটা জানেনও আবার জানেনও না। তাতে বাঙ্গালী মুসলমানের কিছু যায় আসেও না; তর্ক-বিতর্কে এতটুকু ভাটাও পরেনা। এভাবেই চলছে বাঙ্গালীর দৈনন্দিন ধর্মাচরণ। চলছে, চলবেই।

No comments:

Post a Comment