Sunday, August 30, 2009

ঈশ্বরের রাজনৈতিক ক্ষমতালোভ

নাস্তিক মননের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। কোন একজন ব্যাক্তি যখন ঈশ্বরের ধারনাকে অস্বীকার করার মত অবস্থায় পৌঁছান, তখন তার মনে নাস্তিকতাকে জড়িয়ে কোন রাজনৈতিক ধান্দা থাকে না। এটি এমন একটি নৈতিক অবস্থা যখন মানুষ তার অনৈশ্বরত্বকে কোন স্বার্থ হাসিল করতে ব্যবহার করতে লজ্জা বোধ করে। সামস্টিকভাবে হয়তো এর প্রকাশ-প্রচার হতে পারে, কিন্তু নাস্তিকতা কখনই জোর করে চাপিয়ে দেয়ার জিনিস নয় – নাস্তিকতা নিতান্তই ব্যাক্তিগত উপলব্ধি-অর্জন।

কিন্তু ঈশ্বরবিশ্বাসীরা দলবদ্ধ। তাদের মূল শক্তিও ঐক্যে, যুথবদ্ধতায়। যুগে যুগে তাই ধর্মবাদীরা ভীষণ শক্তিশালী। কার বিরুদ্ধে তারা এই শক্তি ব্যবহার করে? নাস্তিকদের বিরুদ্ধে? আংশিকভাবে তা ঠিক। কিন্তু ধর্মবাদীদের আসল টক্করটা তার বিরুদ্ধেই যে তাদের স্বার্থে ন্যুনতম আঘাত করতে পারে। স্বার্থের ব্যাপারে ধর্মবাদীদের সেনসিটিভিটি এতই প্রবল তারা নিজেদের দল বিভক্ত করতেও দ্বিধা করে না। একই ধর্মের ভিতরেও তাই এত বিভক্তি। খ্রীশ্চানিটি আর ইসলামে এই বৈশিষ্টটি নগ্নভাবে প্রকাশিত। সেক্ট আর মাজহাব, দল আর উপদল – এভাবেই স্বার্থের লোভে ধর্মবাদীর যুগে যুগে বিভক্ত হয়েছে।

তার পরেও তারা শক্তিশালী। তারা প্রচন্ড ভোক্যাল। তারা ভীষণ তৎপর। অস্তিত্ব রক্ষায় তারা অনুক্ষন সচেতন। প্রাচীন-মধ্য-আধুনিক সব যুগেই ধর্মবেত্তারা তাদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে রাজনৈতিক পক্ষাপক্ষ অবলম্বন করার কৌশল। রাজা আর পুরোহিতের সম্পর্ক সাধারণ মানুষ স্মরণাতীত কাল ধরে দেখে এসেছে – রাজা ছাড়া পুরোহিত অচল, পুরোহিত ছাড়া অচল রাজা। মধ্যযুগে য়ুরোপীয় বর্বরতার পেছনেও ধর্মবাদীরাই ছিল। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে কয়েকশত চার্চের কর্ণধার ধার্মিক(!) পুরুষেরা। আর এসবই করেছে রাজার সহায়তায়। বিনিময়ে রাজা পেয়েছে আফিমে আসক্ত প্রজাকূল, নির্জীব-নির্বিরোধী-নিরাসক্ত। পুরোহিত মানুষকে বিশ্বাস করিয়েছে, রাজা নমস্য, রাজাই পিতা, রাজাই পতি, (ঈশ্বরের পরে) রাজাই পালনকর্তা, শাসনকর্তা। সমন্তসমাজে রাজা আর ধর্মীয় পুরোহিত ছিল সত্যিকারের আত্মীয়। আর প্রজাকূল – শাসন, শোষন আর করুনার পাত্র।

যুগ পাল্টেছে, সমাজের কাঠামো পাল্টেছে। কিন্তু এখনো সমাজপতিদের রক্ষাকবচ হয়েই আছে ধর্মীয় পান্ডারা। দেশে দেশে সকল সরকারই তোয়াজ করে ধর্মের পতাকাবাহী যেকোন প্রাণিকেই – চাই সে মানুষ হোক আর জানোয়ার। অন্যভাবে বলতে গেলে ঈশ্বর এখন পর্যন্ত গণমানুষের হতে পারেনি। তিনটি পরিষ্কার দলে তাবৎ দুনিয়া এখন বিভক্ত – রাজদন্ডের মালিক, ধর্মবাদী গোষ্ঠী আর সাধারণ মানুষ। সংখ্যার সবচেয়ে কম প্রথম দল, তারপর একটু বেশি দ্বিতীয় দল, আর সবচেয়ে বেশি তৃতীয় দল। অথচ, সংঘবদ্ধতা আর শক্তির দিক থেকে এই ধারা উল্টোমুখী।

কিন্তু কেন? সহজে এক কথায় বলতে গেলে মানুষ ব্যস্ত ঘাম ঝড়িয়ে তার জীবিকা অর্জনে, পুরোহিত বা রাজদন্ডের মালিক কারো কাছ থেকেই সে কিছু পায় না চায়ও না। আর পক্ষান্তরে রাজপতির ক্ষমতার উৎসই জনতা (অবাক হবেন না, তারাও তাই বলে!)। জনতা কখনই জানতে চায় না, তারা কার ক্ষমতার উৎস? কার খেলার ঘুটি? সুতরাং রাজপতির প্রয়োজন জনতাকে বশে রাখবার। মাঝখানে ফড়িয়া হয়ে এঁটে বসে ধর্মবাদীরা। রাজার প্রয়োজন মেটায় তারা, বিনিময়ে উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে বেঁচে থাকে মাত্র। আবার রাজা আর ধর্মবাদীরা জনতাকে শেখায় এই ধর্মগোষ্ঠী বড়ই সম্মানের পাত্র!

স্বার্থের প্রয়োজনেই ধর্মবাদীরা ঈশ্বরকে করে তুলেছে রাজনৈতিক ক্ষমতালোভী। এখানে নীতির কোন স্থান নেই।

No comments:

Post a Comment