Thursday, November 12, 2009

নির্লজ্জ বার্লিন উৎসব মনে করিয়ে দেয় পুঁজির সর্বগ্রাসী বিভৎসতা

টিভিতে কাল দেখছিলাম বার্লিন প্রাচীর ভাঙার ২০ বছর উপলক্ষ্যে বিপুল আয়োজন। পুঁজিবাদী দেশগুলোর চীফ এক্সেটিউটিভরা একত্র হয়েছেন, তালে তালে শরীর দোলাচ্ছেন, অসংখ্য মানুষও জমায়েত হয়েছে। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ! উদযাপন চলছে, বিশ্বনেতারাও করছেন, আমজনতাও করছে - সবাই কী যেন একটা উদযাপন করছে! মোড়লদের চোখে মুখে অদ্ভুত মিশ্র রকমের হাসি! যেন বলছে দেখ দেখ, সাম্যবাদ পচা পুজিবাদ লক্ষ্মী। আমরা পূর্ব জার্মানি থেকে পচা সাম্যবাদ দূর করেছি, তার বদলে দিয়েছি আমাদের কোকাকোলা সাথে অবশ্য দিয়েছি খানিকটা বেকারত্ব, বেশি না এই মাত্র সাড়ে ৩ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারালো বার্লিন প্রাচীর ভাঙার মাত্র ৩ বছরের মধ্যেই।

বেকারত্ব? হ্যাঁ ভালো জিনিস পেতে গেলে খানিকটা অসুবিধা তো ভোগ করতেই হবে, তাই বেকারত্বটুকু মেনে নাও বাপু। তার বদলে পূর্ব জার্মানি ভালো কী-টা পেয়েছে? এটা আবার জানতে চাও কেন, নিজে বোঝনা? স্বাধীনতা পেয়েছো তোমরা স্বাধীনতা। স্বৈরাচারী সাম্যবাদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছো, এসেছে স্বাধীনতার প্রতীক পুঁজিবাদ! এখন তোমার যার ইচ্ছা তার অধীনে কাজ করতে পারবে। পাবলিক বুঝলো উল্টো, অর্থাৎ এখন যার ইচ্ছা আমাদেরকে শোষণ করতে পারবে! এবং শোষিত মুনাফার বদলে আমাদের ভালো-মন্দের কোন দায় সে নেবে না, যেমন নিত স্বৈরাচারী পূর্ব জার্মান রিপাবলিক।

২০ বছর পরে এসে হিসেব কযে দেখা যাচ্ছে বার্লিন দেয়াল ভেঙে পূ্র্ব জার্মানীর জনগণের আসলে কোনই ফায়দা হয়নি হয়েছে। যা হয়েছে তা কেবল পশ্চিম জার্মানীর এবং অনিরমেয়ভাবে বিশ্ব-পুঁজির একচ্ছত্র মালিকদের। ৯০ সালে একীভূত জার্মানীর চ্যান্সেলর হেলমুট কোল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অচিরেই পূর্ব জার্মানী এক 'ফ্লুরিশিং ল্যান্ডস্কেপে' পরিনত হবে। বাস্তবে ঘটেছে ভিন্ন। উদাহরণ দিলে আরেকটু পরিষ্কার হবে, পূর্ব জার্মানীর হেল (Halle in Saxony-Anhalt) শহরের রাসায়নিক কারখানায় ১ লাখ চাকরী ছিল দেয়াল ভাঙার আগের দিনও, আজ তা ১০ হাজারে এসে ঠেকেছে। দুই জার্মানির সম্মিলিত বেকারত্বের হার এখন প্রায় ৮ শতাংশ কিন্তু পূর্ব জার্মানীর একক বেকারত্বের হার ১২ শতাংশের ওপরে। অথচ তথাকথিত 'স্বৈরাচারী' জার্মানীতে এই হার ছিল দৃশ্যত শূণ্য!

স্বাধীনতাই পেয়েছে পূর্ব জার্মানির জনগণ - আগে দেশ ছাড়তো স্বৈরাচারী পুলিশের ভয়ে, এখন পালায় বেকারত্বের থাবা থেকে বাঁচতে। একে পুঁজিবাদী বিশ্বমোড়লরা যতই স্বাধীনতা বলুক না কেন পূর্বজার্মানীর জনগণ তা মনে করে না। তাই তো Der Spiegel পত্রিকার ভোটাভুটিতে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ জনগণ মনে করে পুঁজির বিরুদ্ধে কার্ল মার্ক্সের দর্শণই এখনো সঠিক। ২০০৮ এ এসে মার্ক্সের পুঁজি ('ডাস ক্যাপিটাল') বিক্রির পরিমান ২০০৭ এর তুলনায় তিনগুন বেড়েছে। এমনকি পুঁজির সর্ববৃহৎ পোষক ব্যংকের কর্মকর্তারাও পড়ে দেখছে ব্যাটা মার্ক্স কি এমন লিখেছিল।

বার্লিন দেয়াল ভেঙে ফেলতে মানুষের ঐক্য ছিল সত্য সাথে সাথে এও সত্য যে 'স্বৈরাচারী' বলে যাকে উড়িয়ে ফেলেছে পুঁজিবাদি বিশ্ব সে রেজিমেও সম্ভব ছিল মানুষের পক্ষে একত্র হয়ে পরিবর্তনের জন্য দাঁড়নো। কিন্তু পুঁজির প্রবল তোড়ে এখন মানুষ খড়কুটোর মত ভেসে যাচ্ছে সারা পৃথিবীব্যাপী, থামানোর যেন কোন উপায়ই নেই। মানুষের পক্ষে যেন সম্ভবই হচ্ছে না ঐক্যবদ্ধ হওয়া। তাই, গাজায় দেয়াল উঠছে, ইরাকে দেয়াল উঠছে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে নির্যাতিত হচ্ছে মানুষ। লাভের গোলাটা ভরছে কেবল পুঁজির মালিকদের, বাকি সবাই তাদের কেনা গোলাম মাত্র।

http://www.somewhereinblog.net/blog/proshnoblog/29041444

No comments:

Post a Comment